Header Ads

JAHANARA HUQ MOHILA COLLEGE

জাহানারা হক মহিলা কলেজ

ভাষাতত্ত্ব | ভাষাবিজ্ঞান | ভাষাবিজ্ঞানের শ্রেণিবিভাগ বা শাখা | ভাষার স্বরূপ | যুগবিভাগ |

 


ভাষাতত্ত্ব (Philology)

ভাষাতত্ত্ব হচ্ছে মানবিক ভাষার বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষা। মানুষের ব্যবহৃত ভাষার বিশ্লেষণই ভাষাতত্ত্বের মূল লক্ষ্য। ভাষাতত্ত্বে ভাষার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভাষার বিভিন্ন উপাদান এবং পদ্ধতির সাহায্যে ভাষার রূপ বিশ্লেষিত হয়ে থাকে। ভাষাতত্ত্বের বিষয়ধ্বনিতত্ত্ব, রূপমূলতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, বাগর্থতত্ত্ব।

ভাষাবিজ্ঞান (Linguistics) :

ভাষাবিজ্ঞান হচ্ছে ভাষার বিজ্ঞানসম্মত পঠনপাঠন। ভাষা সম্পর্কিত সুশৃঙ্খল সুসংবদ্ধ জ্ঞানই ভাষা বিজ্ঞান। ভাষা বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ভাষার আন্তঃশৃঙ্খলা উদ্ঘাটন

ভাষাবিজ্ঞানের শ্রেণিবিভাগ বা শাখা : () কালকেন্দ্রিক কালানুক্রমিক ভাষাবিজ্ঞান () সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান না তত্ত্বীয় ভাষাবিজ্ঞান () বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান () তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান () সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞান () নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞান () কম্পুটিরীয় ভাষাবিজ্ঞান () গাণিতিক ভাষাবিজ্ঞান () দার্শনিক ভাষাবিজ্ঞান () মনো ভাষাবিজ্ঞান

() সমাজ ভাষবিজ্ঞান () প্রায়োগিক ভাষাবিজ্ঞান

 

ভাষার স্বরূপ

মানুষ একান্তে প্রকাশ কামনা করে। তার ভিতরের আবেগ-প্রেরণা বাইরে নানাভাবে রূপে উচ্ছ্বসিত প্রসারিত এবং ক্রমাগত সম্পূরণ করতে চায়। এই প্রকাশের ব্যাকুলতা থেকেই ভাষার সৃষ্টি। আদিম মানুষেরা উন্মাদনার বিচিত্র ধ্বনি উচ্চারণ করে মানবমনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-উচ্ছ্বাস, আশা-নৈরাশ্য ভাব প্রকাশের তাগিদ বেগ-উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ করেছে। সেই সময় থেকে প্রাচীন ভাষা কালিক প্রশ্রয়ে সময়ের তাগিদে আবর্তন-বিবর্তন, উন্মেষ-বিকাশে নানারূপ উত্থানপতনের মাধ্যমে সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় শামিল হয়েছে।

মানুষের সামাজিক উন্নতির ধারাবাহিকতায় ভাষার যে বিপুল পরিবর্তন- তা অত্যন্ত স্বাভাবিক। মানুষ ক্রমশ চিন্তাশীল হয়ে পড়েছে। আর তার সেই চিন্তার প্রকাশে ভাষার অবদানই বেশি। মনের ভেতরে মনের সঙ্গে যে একান্ত সংলাপ চেতনঅচেতন মনের ধোঁয়াশা প্রকাশ্যে সব স্থানে নিরবচ্ছিন্ন চলছে, তাকে আরো বেগবান সমৃদ্ধ করেছে ভাষা। অনুভূতি অন্তর- উপলব্ধির মাধ্যমে নিজ সত্তার অপূর্ব আবিষ্কারে ভাষা যেন এক অপরিহার্য কাণ্ডারি

মানুষের সামাজিক রূপের আড়ালে যে রূপ তার একান্ত নিজস্ব সেই ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের মুকুটের মধ্যমণিই হলো ভাষা। ভাষার পরিমিত যথোপযুক্ত প্রয়োগই ব্যক্তিত্বের রূপকার। মানুষ দ্বৈতরূপে জীবন জগৎকে দেখতে পায়। তার এই দ্বৈতরূপের একটি তার অন্তরসত্তা অর্থাৎ 'আমি' অন্যটি ইহা' অর্থাৎ বাইরের রূপময় সত্তা। ভাষা এই দ্বৈত অস্তিত্ব চেতনার সেস্বরূপ।

ভাষ৷ নীরব সরব দুই প্রকারের হতে পারে। ভাষায় ভাবচিন্তা আবেগের যথার্থ লালন হয়। সরব প্রকাশ কেবল অন্যকে জানানোর জন্য নীরব প্রকাশও কখনো কখনো অন্যকে মনোভাব জানায়। কিন্তু তার ভেতর আত্মোপলব্ধির শিকড় প্রোথিত থাকে, যার মাধ্যমে মনের সরস উপলব্ধি উঠে এসে প্রকাশ্য হয়।

ভাষার ব্যবহারিক দিকগুলো আলোচনা করা আবশ্যক। ভাষা একটি কৌশল শিল্পকলা, যাকে ব্যবহার অনুশীলন দ্বারা আয়ত্ত করতে হয়। ক্রমাগত অভ্যাস আন্তরিক নিষ্ঠার ওপর নির্ভর করে ভাষা সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়। মানুষের মনন-চিন্তন নিত্য বিকাশমান। কাজেই তার ভাবচিন্তা ধারণে সমর্থ পুরনো শব্দগুলো স্ব অর্থে টিকে থাকে, অন্যগুলো হয় বাদ পড়ে, নয়তো পুরোনো দেহে নব অভিধা নিয়ে বেঁচে থাকে। এতেও কুলায় না, তাই অর্থপূর্ণ ব্যঞ্জনাবহ নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি হয় সৃষ্ট প্রতিভাসাপেক্ষ, তাই প্রয়োজনে উদ্দিষ্ট ডারবাহী শব্দ অপর ভাষা থেকে ধার নিতে হয়। 

ভাষার সুষ্ঠু মার্জিত প্রকাশ এবং ব্যবহারের মধ্যেই ব্যক্তিমানসের অন্তর পরিচয়, ব্যক্তিত্বের প্রকাশ এবং গোটা জাতির সত্যকার বৈদগ্ধ রূপ স্পষ্ট, উদ্ঘাটিত উচ্ছ্বসিত হয়

শ্রোতার নিকটেও ভাষা একটি ধ্বনিপ্রবাহ। সে ধ্বনি প্রতীকের সাহায্যে উহার অর্থ প্রকাশ করে থাকে। পাঠকের কাছে ভাষা সারিবাঁধা চিহ্ন শ্রেণি মাত্র। এই চিহ্ন বা ধ্বনি-সংকেত হাতের লেখায় বা ছাপার অক্ষরে কাগজের ওপর প্রকাশিত থাকে। এসব সংকেত-ধ্বনি বিভিন্ন ভাগে, দলে বা গুচ্ছে সাজানো হয়। শব্দগুলো তাই বাক্য তথা ছেদ যতি চিহ্নিত ধ্বনিপ্রবাহের একক বা ইউনিট। লেখকের কাছে ভাষা কতকগুলো শ্রেণি প্রসারিত সংকেত-চিহ্ন এবং এই চিহ্ন দ্বারা ধ্বনির প্রতীক অক্ষর, অক্ষর দ্বারা রচিত শব্দ এবং শব্দের গুচ্ছ বাক্য নিজের ভাব চিন্তার বাহন হিসেবে কলমের সাহায্যে প্রকাশ

বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যেমন দক্ষতা বা নিপুণতা লাভ করি, তেমনি ক্রমাগত ব্যবহার বা চর্চার দ্বারা ভাষার দখল বা দক্ষতা অর্জন করতে পারি। ভাষার ক্ষেত্রে এই অনুশীলনের অন্য নাম সাধনা। শিক্ষকের কাছে ভাষা ভাই একটি অভ্যাস, সাধনা বা একাগ্র চেষ্টা।

ব্যবহারিক বিজ্ঞানে অর্থাৎ ব্যাকরণে আমরা ভাষার বৈচিত্র্য বিশেষভাবে লক্ষ করি। ব্যাকরণ বিশ্লেষণ গঠনরীতির পরিচয় দেয় এবং এই পরিচয় অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। ভাষার তিনটি রূপ। যথা. ধ্বনিবিজ্ঞান (Phonetics) বা ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology), . বাক্যরীতি (Syntax), . রূপতত্ত্ব (Morphology)

কোনো এক গৃহায় বা অরণ্যের নির্জনে আদিম মানুষ পর্ণকুটিরে ভাষার একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ জ্বেলেছিল। বহু শতাব্দী ধরে মানবমনের আবেগ লালনে উদ্দীপনায় দ্বীপটি শত সহস্র শিখায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অথবা পর্বত শ্রেণি থেকে মানবমনের যে বিপুল আবেগপ্রবাহ উৎসারিত হয়ে একটি ধারায় পরিণত হয়, চারদিকে প্রসারিত গতি পরিবর্তিত হয়ে সে ধারা বহু স্রোতে বয়ে যাচ্ছে।

 

ভাষার মূলধর্ম হিসেবে মধ্যযুগের সাধক কবি রজ্জবজীর একটি পক্তিমালা পাই-

গৈৰ কুঁ রূপ দে

মৈন কুঁ ভাস দে ৰাণী দে বাণী দে,

দে দে প্রকাস দে।"

অর্থাৎ যা যৌন, তাকে বাণী দাও, যা অদৃশ্য, তাকে প্রকাশ করো। বাণীরূপে আমাকে প্রকাশ দাও।

তাই ভাষার মূলমন্ত্র মনের ভাব প্রকাশ এবং নিজের ভেতর বাইরের জগৎ জীবনকে বচনে-বাচনে এবং চিন্তনে মননে চিনতে বুঝতে পারার ক্ষমতা প্রদান।

 যুগবিভাগ

বাংলা ভাষার উদ্ভকাল নিয়ে ভাষাপণ্ডিতদের মধ্যে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। . মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে অনুশারে, বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে প্রায় সপ্তম শতাব্দীতে। . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন নবম শতকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। যা- হোক, বাংলা ভাষা তার জন্মের পর থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান কাল পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। প্রথম থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সময়ের বাংলা ভাষাকে প্রধান তিনটি যুগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন :

. প্রাচীন যুগ (৬৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত)

. মধ্য যুগ (১২০১ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত)

. আধুনিক যুগ (১৮০১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত)

 

                যুগবিভাগ

 

   প্রাচীনযুগ                                   মধ্যযুগ                           আধুনিক যুগ

                         (৬৫০-১২০০)                              (১২০১-১৮০০)                    (১৮০১-বর্তমান)

. প্রাচীন যুগ

বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগের পরিধি সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক (৬৫০-১২০০) পর্যন্ত। প্রাচীন যুগের বাংলা ভাষার একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিদর্শন 'চর্যাপদ' মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন। 'হাজার বছরের পুরান বাঙালা ভাষায় বৌদ্ধ গান দোঁহা' নামে ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চর্যাপদ প্রকাশিত হয়। 

. মধ্যযুগ

বাংলা ভাষার মধ্যযুগের পরিধি ১২০১ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে ১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত দেড়শ বছর অন্ধকার যুগ নামে পরিচিত। মধ্যযুগের বাংলা ভাষার প্রথম নির্ভরযোগ্য সাহিত্যনিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাস রচিতশ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য। ১৯০৭ সালে এর পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ। তাঁরই সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' প্রকাশিত হয়।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.