Header Ads

JAHANARA HUQ MOHILA COLLEGE

জাহানারা হক মহিলা কলেজ

ভাষা ও বাংলা ভাষা | বাংলা ভাষার পরিচয় | ভাষার সংজ্ঞা | ভাষার বৈশিষ্ট্য | ভাষার শ্রেণিবিন্যাস | মৌখিক ভাষা | লিখিত ভাষা

 



ভাষা (Language)

ভাষা বাংলা ভাষা : ভাষা মানবজীবনে সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ দান। প্রাণিজগতে মানুষের যে শ্রেষ্ঠত্ব, তার মূলেও রয়েছে এই ভাষা ভাষাই মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের প্রকাশ, মানুষের অভিব্যক্তি, মানুষের জীবনযাপনসবকিছুই তার ভাষাকে কেন্দ্র করে। কারণে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, 'মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে যুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।' এই বিবৃতি প্রচলিত অর্থে সভা হলেও আধুনিক দৃষ্টিতে অকৃত্রিম তথ্য নয়।

কিছুদিন আগেও ভাষাবিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মানুষের মধ্যে একে অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনিমালা উচ্চারিত হয় যে পদ্ধতি ব্যবহার করে, তা- ভাষা। কিন্তু সর্বাধুনিককালে বিজ্ঞানীরা ভাষাকে যে দৃষ্টিতে দেখেছেন, সে সম্পর্কে সর্বাধুনিক ধারণাটি এসেছে এর কার্যকারিতার দিক থেকে, বর্ণনা বা বিশ্লেষণের দিক থেকে নয়। ভাষার আসল কাজ যেহেতু যোগাযোগ স্থাপন, সেহেতু ভাষার সবচেয়ে আধুনিক যৌক্তিক সংজ্ঞাটি এভাবে দেয়া যায় : "ভাষা হলো মনুষ্য যোগাযোগের পদ্ধতিবিশেষ, যার ভিত্তি হলো যথেচ্ছ প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত কণ্ঠধ্বনি/বাগধ্বনি”(ব্রুস এল পিয়ারসন অনুসরণে)

ভাষা আমাদেরকে মানবিকতা দিয়েছে। আমরা যে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল, একে অন্যকে ভালোবাসি, বুঝি, সাহায্য করি, তা মূলত ভাষার কারণেই। ভাষাকে ব্যবহার না করে মানুষ তার অভিজ্ঞতাকে পৌঁছে দিতে পারত না অন্যের কাছে। ভাষা না থাকলে তার দুঃখ বা সুখের অনুভব, তার সহানুভূতি বা বিদ্বেষ ব্যক্ত হতো না সুচারুরূপে, দক্ষতার সঙ্গে। মানুষের ভাষা প্রতি মুহূর্তে সৃজনশীল। মানুষের ভাষায় উৎপাদনশীলতা রয়েছে। এজন! মানবভাষার শ্রেষ্ঠত্ব আজও অক্ষুণ্ণ। অন্য কোনো প্রাণীর ভাষায় এই সঞ্জননী (জেনারেটিভ) ক্ষমতা নেই। আসলে ভাষা শুধু অভিজ্ঞতা চিন্তার ফসলকে ধারণ পৌঁছে দেবার কাজই করছে না, ভাষা অভিজ্ঞতা লাভ চিন্তাকে দ্রুত সম্ভব করে তুলেছে। এই

মানবভাষা যদি না থাকত, তাহলে আমরা বুদ্ধি পরিচালিত মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতাম না। একজনের সাথে অন্যজনের মনোজগতের মিল হতো না। তারপরও ভাষার আদি স্রষ্টার সন্ধান না মিললেও প্রতিনিয়তই ভাষা নিঃশব্দে পৃথিবীর ঘুম ভাঙায়, প্রকৃতিকে জাগায় মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, মানুষের ভাষার কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা বিশ্ব। ভাষা বহতা নদীর মতো চঞ্চল। স্থিরতা এর স্বভাববিরুদ্ধ। পরিবর্তন, পরিবর্ধন ভাষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে কালের গর্ভে কত ভাষা হারিয়ে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই, আবার নতুন করে কত ভাষার জন্ম হয়েছে, তারও যথার্থ হিসাব নেই এই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভাষার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা। একাধিক দেশের কমবেশি ৩০ কোটি মানুষ ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের বিহার, আসাম, মনিপুর, ত্রিপুরা রাজ্যের অনেক লোক বাংলা ভাষাতেই কথা বলে। বর্তমান ব্রিটেনের অপ্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা (সিলেটী) সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা। আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য জাপানেও প্রচুর বাংলাভাষী রয়েছে। 

বাংলা ভাষার পরিচয়

মানুষের মুখে ভাষা সৃষ্টি এক অপার রহস্য। এই রহস্যের দ্বার উন্মোচন করা আদৌ সম্ভব নয়। এক স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়, অবচেতনে সৃষ্টি হয়েছে এই ভাষা। তাই সৃষ্টির আদিতে পৌঁছাতে না পারলেও আমরা আমাদের ইতিহাসের উত্তরীয় ছুঁয়ে পৌঁছে যেতে পারি অনেক দূরে।

এক হাজার বছর আগে ভাষা এমন ছিল না, আবার এখন থেকে এক হাজার বছর পরও এমনটি থাকবে না, তা অনায়াসে বলা যায়। ভাষার ধর্মই হলো বদলে যাওয়া। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি। রূপ বদলে যায় শব্দের, ঘটে অর্থের। এভাবে ক্রমাগত পরিবর্তনের পথে হেঁটে ভাষাটি হয়ে যায় একটি নতুন ভাষা। একইভাবে হাজার বছর ধরে পরিবর্তনের (গ্রহণ, বর্জন বিকৃতির) মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা যে ভাষায় আমরা কথা বলি, গান গাই তা বাংলা ভাষা। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে, ক্রোধান্ধ হয়ে, বিস্মিত হয়ে আমরা আমাদের সমস্ত আবেগ প্রকাশ করি এই ভাষাতেই। 

 ভাষার সংজ্ঞার্থ

মানুষ মনের ভাব একে অন্যের নিকট প্রকাশের জন্য যেসব অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে ভাষা বলে।

ভাষাপণ্ডিতগণ ভাষা সম্পর্কে নানাভাবে তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। তারা তাদের মতো করে ভাষার সংজ্ঞান প্রদশন করেছেন। নিচে কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞার্থ তুলে ধরা হলো।

"মনুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির দ্বারা মনের ভাব একে অন্যের নিকট প্রকাশ করে, তাহার নাম ভাষা।. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।'- . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুঞ্জনবোধ্য ধ্বনিসমষ্টিই ভাষা '- . সুকুমার সেন

মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে অপরের বোধগম্য যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে থাকে, সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে।' – . মুহম্মদ এনামুল হক।

*বাগ্যন্ত্রের দ্বারা উচ্চাবিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে।'- মুনীর চৌধুরী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী।

 ভাষার বৈশিষ্ট্য

ভাষার সংজ্ঞার্থের মধ্যেই নিহিত আছে ভাষার বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর সব মানুষই ভাব প্রকাশ করে। একই ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে। এভাবে ভাষা আলাদা হয়ে পড়ে। ফলে ভাষার নিয়ে বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিচে ভাষার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণিত হলো।

ভাষা হলো ভাবের বাহন।

যা ধ্বনির মাধ্যমে ভাষ। উচ্চারিত হয়।

অর্থবোধক ধ্বনিই ভাষা। যেসব ধ্বনির অর্থ থাকে না, তা ভাষা নয়। যেমন : পশুপাখির ডাক বা ধ্বনি ভাষা নয়।

ভাষা হলো মানুষের যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। ভাষার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কের বন্ধন। তাই অতীত বর্তমান মানুষের মধ্যে সংযোগ সেতুর কাজ করে ভাষা।

ভাষা পরিবর্তনশীল। কোনো ভাষাই চিরকাল একরকম থাকে না। ভাষার পরিবর্তনশীলতা যুগে যুগে নতুন ভাষার জন্ম দিয়েছে।

ভাষা গতিশীল। কোনো বাধাই তার চলার গতিকে থামাতে পারে না। বহমান নদীর মতো সে এগিয়ে চলে।

ভাষা বহুজনবোধ্য এবং সে তার নিজস্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন সার্বভৌম।

বিশেষ জনসমাজে বিশেষ ভাষা ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে মানুষ নানা রকম ভাষায় কথা বলে

ভাষার শ্রেণিবিন্যাস

ভাষা হচ্ছে মানুষের ভাব প্রকাশের শ্রেষ্ঠ বাহন। ভাষাকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন : . মৌখিক ভাষা . লিখিত ভাষা।

. মৌখিক ভাষা

লিপি আবিষ্কারের আগে ভাষাকে স্হায়ীভাবে লিখে রাখার সুযোগ ছিল না। তখন মানুষ মুখে মুখে কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করত। ফলে ভাষার স্থায়িত্ব ছিল না। এখনো বিশ্বের কোনো কোনো জাতিগোষ্ঠীতে ভাষা হিসেবেই মুখের ভাষা প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে যেসব ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বসবাস করে, তাদেরও নিজস্ব ভাষা আছে, কিন্তু সেগুলোর লিখনব্যবস্থা তৈরি হয়নি। তাদের ভাষা মুখে মুখেই প্রচলিত। যেসব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার লিখনব্যবস্থা তৈরি হয়নি, সেগুলোকে মৌখিক ভাষা বলে

. লিখিত ভাষা

মুখের ভাষা কানে শোনা যায়, চোখে দেখা যায় না। শোনার পর তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। ফলে কেউ যখন কোনো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা প্রয়োজনের কথা বলে, তার কোনো স্থায়িত্ব থাকে না এবং ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তা প্রমাণহীন হয়ে পড়ে। তাই কথাকে ধরে রাখার জন্য মানুষ নানাভাবে চিন্তা শুরু করে। তারপর একসময় লিপি আবিষ্কারের মাধ্যমে লিখনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে। সাধারণত বর্ণমালার মাধ্যমে যে ভাষায় মানুষের মনোভাব লিখে প্রকাশ করা যায়, তা- হচ্ছে লিখিত ভাষা। লিখনব্যবস্থায় মানুষের মনোভাবকে স্থায়ীভাবে ধরে রাখা যায়। ভাষার ব্যবস্থা আবার তিন রকমের। যেমন: i. বর্ণভিত্তিক, ii. অক্ষরভিত্তিক iii ভাবাত্মক

i. বর্ণভিত্তিক : পৃথিবীর সকল উন্নত ভাষারই বর্ণ আছে। যেসব ভাষা বর্ণ দিয়ে লেখা হয় তা- বর্ণভিত্তিক ভাষা যেমন : বাংলা, ইংরেজি, রুশ ইত্যাদি।

ii. অক্ষরভিত্তিক : অক্ষর হলো একবারে উচ্চারণযোগ্য শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশ। কথা বলার সময় অংশই উচ্চারিত হয়। একে উচ্চারণের একক ধরা হয়। অক্ষর দিয়ে যেসব ভাষা লেখা হয়, তাকে বলে অক্ষরভিত্তিক লিখনব্যবস্থা। যেমন : জাপানি ইত্যাদি ভাষা।

iii. ভাবাত্মক : পৃথিবীর কয়েকটি দেশে এমন কিছু ভাষা রয়েছে, যা লেখার জন্য কোনো বর্ণ বা অক্ষর ব্যবহার করা হয়। অনেকটা ছবি এঁকে এসব ভাষা লেখা হয়। এটাই হলো ভাবাত্মক লিখনব্যবস্থা। চীনা কোরীয় ভাষ৷ পদ্ধতিতে লেখা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.