Header Ads

JAHANARA HUQ MOHILA COLLEGE

জাহানারা হক মহিলা কলেজ

বাংলা ব্যাকরণ : উদ্ভব ও বিকাশ | ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব |

 

এই পাঠ শেষে যা যা শিখতে পারবে

১। বাংলা ব্যাকরণের: উদ্ভব ও বিকাশ  ব্যাখ্যা করতে পারবে।

২। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে।

বর্ণনামূলক
 ব্যাকরণ, ঐতিহাসিক ব্যাকরণ, তুলনামূলক ব্যাকরণ, দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ সম্পর্কে আলোচনা করতে পারবে।

বাংলা ব্যাকরণ : উদ্ভব বিকাশ

বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ-চর্চার সূত্রপাত হয় বাংলা ভাষার উন্মেষের প্রায় হাজার বছর পর। বাংলা ভাষায় প্রথম ব্যাকরণ রচয়িতা পর্তুগিজ পাদ্রি ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্পসাঁও। তিনি ১৭৪৩ সালে লিসবন থেকে তাঁর বইটি প্রকাশ করেন। বইটি পর্তুগিজ-বাংলা অভিধানের অংশবিশেষ মাত্র। তবে প্রকৃতপক্ষে বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণটি লেখেন ইংরেজ পণ্ডিত নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড (১৭৫১-১৮৩০) তার গ্রন্থের নাম 'A Grammer of the Bengal Language হুগলি থেকে এটি প্রকাশিত হয় ১৭৭৮ সালে।

উনিশ শতকে ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরণ প্রণেতাদের মধ্যে উইলিয়াম কেরি (১৮০১), গঙ্গাকিশোর (১৮১৬), কিথ (১৮২০), হটন (১৮২১), রামমোহন রায় (১৮২৬), শ্যামাচরণ সরকার (১৮৫০), বিম্স (১৮৭২), শ্যামাচরণ গাঙ্গুলি (১৮৭৭), যদুনাথ ভট্টাচার্য (১৮৭৯), কে পি ব্যানার্জি (১৮৯৩) উল্লেখযোগ্য। সময়ে অনেকেই বাংলা ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। বাংলা ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ রচয়িতাদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় (১৮৩৩), শ্যামাচরণ সরকার (১৮৫২), ব্রজনাথ বিদ্যালংকার (১৮৭৮), নিত্যানন্দ চক্রবর্তী (১৮৭৮), নীলমণি মুখোপাধ্যায় (১৮৭৮), কেদারনাথ তর্করত্ন (১৮৭৮), চিন্তামণি গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৮১), প্রসনচন্দ্র বিদ্যারত্ন (১৮৮৪), বীরেশ্বর পাঁড়ে (১৮৯১), নকুলেশ্বর বিদ্যাভূষণ উল্লেখযোগ্য।

বাঙালিদের মধ্যে বাংলা ভাষায় প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁর রচিত বাংলা ব্যাকরণের নাম 'গৌড়ীয় ব্যাকরণ' (১৮৩৩) তবে তিনিও প্রথমে (১৮২৬ সালে) ইংরেজিতেই বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেছিলেন 'ব্যাকরণ কৌমুদী' আধুনিককালে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭), . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫-১৯৬৯), . সুকুমার সেন (১৯০১-১৯৯২), . মুহম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮২), মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১) মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (১৯২৬-১৯৭১) উনিশ শতকের শেষের দিকে সাহিত্য পরিষদ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে নব্য বৈয়াকরণদের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সে বৈশিষ্ট্যই অব্যাহত থাকে।

তবে নব্য ব্যাকরণবিদগণ সাময়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁরা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। বিশ শতকে রচিত বাংলা ব্যাকরণগুলো প্রকৃতপক্ষে আগের শতকের বৈশিষ্ট্যই অনুসরণ করেছে। পরবর্তী পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শরত্চন্দ্র শাস্ত্রী, সতীশ চন্দ্র বিদ্যাভূষণ প্রমুখের কেউ কেউ বাংলা ভাষাকে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করে ব্যাকরণ সম্পর্কিত আলোচনা করেন। আবার কেউ কেউ বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের দুহিতা মনে করে ব্যাকরণ রচনায় সংস্কৃত আদর্শকেই অনুসরণ করেন।

গৌড়ীয় বাংলা ব্যাকরণের পরে যারা বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আধুনিক বাংলায় ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে। বাংলা ভাষায় ব্যাকরণের ইতিহাসে সুনীতিকুমারেরভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ' গ্রন্থটির একটি বিশেষ স্থান আছে। এটি বহু বিষয়েই একটি অনন্য গ্রন্থ। সাধু-চলিত দুই ভাষারই সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে বাংলা ভাষার স্বরূপের এত কাছে এর আগে আর কেউ আসেননি।

The Origin and Development of the Bengali Language ( ODBL)- বা বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ধ্বনি পরিবর্তনের যেসব ধারা ধ্বনিবিজ্ঞানের আলোকে লক্ষ করেছেন, তা তিনি এই ব্যাকরণে উপস্থাপন করেছেন, ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনাতেও এর আগে এমন গভীরে কেউ যাননি।

. সুকুমার সেনও বাংলা ভাষাবিষয়ক বহু গবেষণা গ্রন্থের সঙ্গে বাংলা ব্যাকরণের একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। . মুহম্মদ এনামুল হকের 'ব্যাকরণ মঞ্জরী' একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। অধ্যাপক শ্যামাপদ চক্রবর্তীর বাংলা ব্যাকরণও প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিককালের ধ্বনিবিজ্ঞান ব্যাকরণ চিন্তার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছেন মুহম্মদ আবদুল হাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের অন্যদের মধ্যে ভাষা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে যাঁরা বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে মুনীর চৌধুরী, . কাজী দীন মুহম্মদ, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, . আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ, . রফিকুল ইসলাম, . মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক পবিত্র সরকার, . প্রবাল দাশগুপ্ত, . উদয়নারায়ণ সিংহ, অধ্যাপক শিশির কুমার দাশ উল্লেখযোগ্য।

 ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব

ব্যাকরণে ভাষার নিয়মকানুন আলোচিত হয় বলে তা জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে ভাষার বিকাশ ঘটেছে, যুগে যুগে তার কী পরিবর্তন ঘটেছে এবং বর্তমানে ভাষা কোন ধরনের রূপ লাভ করেছে, এসব বিষয় জানার জন্য ব্যাকরণের সাহায্য গ্রহণ করতে হয়।

ভাষা পরিবর্তনশীল হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে তাতে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে ভাষার শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, কিন্তু ব্যাকরণ ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কার করে ঠিক পথে চলার নির্দেশনা দেয়। তাই ব্যাকরণ পাঠের মাধ্যমে ভাষার ভেতরের বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

ব্যাকরণের বিশেষ একটি কাজ হলো ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা করা। ভাষার নিয়মনীতি জানা থাকলে ভাষার সঠিক রূপ রক্ষা করা সহজ হয়। নির্ভুলভাবে বাংলা ভাষা লেখা, পড়া কিংবা বলার জন্য ঠিক পথের সন্ধান দেয় বাংলা ব্যাকরণ। নির্ভুল ভাষাই উন্নতমানের সাহিত্যের বাহন হতে পারে।

ভাষা উচ্চারণের জন্য যেমন ধ্বনির প্রয়োজন, তেমনি লেখার জন্য বর্ণের প্রয়োজন। এই বর্ণ ধ্বনিগুলোর যথার্থ উচ্চারণ স্থাপন ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। বাংলা ভাষায় '', '', '', '', '' এর প্রচলন আছে। এছাড়া প্রচলন আছে', '' এবং যুক্ত বর্ণের। এগুলোর উচ্চারণ পার্থক্য, বানানবিধি ব্যাকরণ পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।

আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় সেই মধ্যযুগ থেকে এমন অনেক শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার কোনো সম্পর্ক নেই। ঐসব শব্দগুলো দু-চারটি নয়, অনেক। এদের ভেতরে রয়েছেআরবি, উর্দু, তুর্কি ইত্যাদি ভাষার শব্দ। আমাদের এই বাংলা ভাষায় এসে মিশেছে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ইত্যাদি বহু শব্দ। ঐসব শব্দ কেৱল কেতাবি নয়, আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহারিক জীবনের ভেতরেও ঢুকে গেছে। ধরনের শব্দ আমাদের শব্দভাণ্ডারকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নতুন নতুন বানানবিধি প্রণয়নের দাবিও আমাদের বাংলা ব্যাকরণে এনে দিয়েছে। বর্ণমালা থেকে শুরু করে কারক, সমাস, উপসর্গ, অনুসর্গ, উচ্চারণ, ধাতু, ক্রিয়া, বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম এবং শব্দের বানান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় আছে সংস্কৃত ব্যাকরণ

শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের ঠিক অর্থ নিরূপণের জন্য এবং নতুন শব্দ কোন কোন উপায়ে গঠিত হয়, সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন। শুধু শব্দ নয়, বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে এবং বাক্যের অর্থ প্রকাশের ক্ষেত্রেও ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন রয়েছে। বাক্যের সাধারণ অর্থ, ব্যঞ্জনাময় অর্থ ভাবার্থ রয়েছে। তাছাড়া সরল বাক্য, জটিল বাক্য, যৌগিক বাক্য গঠন প্রক্রিয়া, বাচ্য, উক্তি, বাগ্ধারা বাক্যতত্ত্বের বিষয়াধীন। অনেক সময় একই পদ বাক্যগঠন কৌশলের জন্য কখনো বিশেষ্য, কখনো বিশেষণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ব্যাকরণ এসব বিষয়ে ধারণা দান করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.