Header Ads

JAHANARA HUQ MOHILA COLLEGE

জাহানারা হক মহিলা কলেজ

প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক প্রভাব। (Effect of Virtual Reality in Daily Life):

 


প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব:

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মাল্টি সেন্সরিং হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারফেসসমূহের ব্যবহার বা মানব ব্যবহারকারীর কম্পিউটার সিমুলেটেড অবজেক্ট বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বাস্তব জগৎ তৈরি হয়। তথ্য আদান-প্রদানে প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার লক্ষণীয়। একজন ব্যক্তির শূন্যে উড়ে যাওয়া, ১২০ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যাওয়া, বিমান ধ্বংস করা কিন্তু বিমানের মধ্যে চালকের কোনো ক্ষতি না হওয়া প্রভৃতি দৃশ্য আজকাল দেখা যায়। গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে, বিল্ডিং ডিজাইনে এবং বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় কাজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলছে।

ভবিষ্যতে যখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে যাবে, তখন তা বিনোদন থেকে শুরু করে যোগাযোগ পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হবে। বিভিন্ন পেশা ও গবেষণায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগের ফলে সমাজে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাব দেখা যাবে বলে প্রযুক্তি বিদ ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।


ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক প্রভাব (Positive effects of virtual reality) :

চিকিৎসা সেবায় : বর্তমান সময়ে চিকিৎসা সেবায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।

১. ডাক্তারদের প্রশিক্ষণে: উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারে MIST (Minimally Invasive Surgical Trainer) দ্বারা বাস্তবের ন্যায় জীবন্ত মানুষের উপর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অপারেশন করা শেখানো হয়। ল্যাপরোস্কোপিক এবং আতঙ্কগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসা, রোবটিক্স সার্জারি এবং চিকিৎসক প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে কম্পিউটার সিম্যুলেশন ব্যবহার করে ল্যাপারোস্কোপির পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল দেখানো হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা হলো এটা ডাক্তারদের নিরাপদ পরিবেশে নতুন কিছু শিখতে বা অনুশীলন করতে সাহায্য করে এবং সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে বাস্তবে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। শিক্ষানবীশ ডাক্তাররা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মেডিকেল ট্রেনিং টুল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে তারা একেবারে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর অপারেশন পরিচালনার মতোই বাস্তবিক অনুভূতি পেয়ে থাকেন। ভার্চুয়াল অপারেটিং কক্ষে ছাত্ররা কৌশলগত দক্ষতা, অপারেশন ও রোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিষয়াদির কার্যপ্রণালি সম্পর্কে অনুশীলন করতে সক্ষম হন ফলে রোগ নির্ণয় করে সমস্যার সমাধান করতে সহজ হচ্ছে।


২. থেরাপি ও রোগ নির্ণয়ে: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দেওয়া হয়। তাছাড়া অপারেশনের সময় রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসায় রোগ নির্ণয়েড ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।

ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে আজকাল ড্রাইভিং শেখানো হচ্ছে। স্বল্প মূল্যের মাইক্রো কম্পিউটার প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ড্রাইভিং সিম্যুলেটর উন্নয়ন করা হয়েছে। কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য চালককে একটি নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়। চালকের মাথায় পরিহিত হেড মাউন্ডেড ডিসপ্লের সাহায্যে কম্পিউটার দ্বারা সৃষ্ট যানবাহনের অভ্যন্তরীণ অংশ এবং আশপাশের রাস্তায় পরিবেশের একটি মডেল দেখানো হয়। পাশাপাশি এর সাথে সংযুক্ত থাকে একটি হেড ট্রাকিং সিস্টেম। যার ফলে ব্যবহারকারী যানবাহনের ভিতরের ও বাহিরের অংশের ৩৬০ ডিগ্রি অর্থাৎ মোভ করে দেখতে পারে এবং কম্পিউটার সৃষ্ট পরিবেশে মগ্ন থাকেন।

মহাশূন্য অভিযানে: যেদিন থেকে মানুষ পৃথিবীর বাইরে পা রাখতে শুরু করল সেদিন থেকেই মহাবিশ্ব জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনে স্থান করে নিল। আর তার পর থেকেই শুরু হলো মহাবিশ্ব জয়ের অভিযান। এ অভিযানের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি প্রস্তুতি পর্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা, নভোচারীদের কার্যক্রম, নভোযান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণে তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। কাল্পনিক পরিবেশে মহাকাশে গবেষণা পরিচালনার বিষয়গুলো মহাশূন্যে খাপ খাওয়ানোর মতো বিষয়গুলো পূর্বেই প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন নভোচারিগণ।

মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল এরোনটিক্যাল এন্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে মহাকাশের পরিবেশ, সেসব পরিবেশে খাপ খাইয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কিভাবে পরিচালনা করতে হবে তা মহাশূন্যে অভিযানের পূর্বেই শিখে নিতে পারেন নভোচারিগণ। হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লোভস ব্যবহার করে কাল্পনিক বাস্তবতায় তারা এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। মহাশূন্যে নভোখেয়াযান বিকল হয়ে গেলে কীভাবে তা সারাতে হবে, কোন যন্ত্র অকেজো হলে তাকে কীভাবে কার্য করা যাবে তার প্রশিক্ষণও এর মাধ্যমে দেওয়া হয়। এর ফলে মহাকাশে তাদের ভ্রমণ অনেক নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।

সামরিক বাহিনীতে: সামরিক বাহিনীতে অনেক বছর ধরে মিলিটারি প্রশিক্ষণে ফ্লাইট সিম্যুলেটর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রচলিত ফ্লাইট সিম্যুলেটরের আরও উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এ ছাড়াও ডার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সিম্যুলেটেড ওয়ার দ্বারা সেনাদের অনেক বেশি বাস্তব ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিমান বাহিনী প্রশিক্ষণে মনুষ্যবিহীন বিমান পরিচালনা এবং রাডার দিয়ে শত্রু-মিত্র বিমান শনাক্তকরণ করা যায়। ফ্লাইট সিম্যুলেশন হলো এমন একটি কাজ যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কৌশল প্রয়োগ করে বিমান চালকদের কোনো ধরনের সত্যিকার বিমান ব্যবহার না করে শুধুমাত্র স্পর্শকাতর কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে বিমান পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

ব্যবসায়-বাগিজ্যে : ব্যবসায়-বাণিজ্যেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার করে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে ক্রেতাগণ পণ্যের গুণগতমান যাচাই ও পণ্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিরূপণ করতে পারবে। তাছাড়া ক্রেতা ও ভোক্তার কাছে পণ্যের ব্যবহার পদ্ধতি ও সুবিধাদি উপস্থাপন করতে পারবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীকে ফাইল কেবিনেট দিয়ে কম্পিউটারের ডেক্সটপে তথ্য খুঁজতে হবে না; বরং ব্যবহারকারী নিজেই ফাইল ড্রয়ার খুলতে পারবে এবং নিজের হাতে ফাইলগুলো সাজাতে পারবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে : পাঠদানকে সহজ, চিত্তাকর্ষক ও আনন্দদায়ক করার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার জটিল ও কঠিন বিষয়গুলো সহজে উপস্থাপন করা যায়। যেমন- মানুষের হৃৎপিন্ড কিভাবে কাজ করে তা বাস্তবে দেখানো বেশ কঠিন কাজ কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তা সহজেই দেখে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা ও করানো যেতে পারে।

নগর পরিকল্পনায়: নগর পরিকল্পনায় ত্রি-মাত্রিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ ঘটিয়ে নগর উন্নয়ন রূপরেখা, নগর যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করা যায়। ফলে পূর্বেই কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা যায়।


শিল্প কারখানায়: শিল্প কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সিম্যুলেশন করা হয়। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে উৎপাদন সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবেলা করা সহজ হয়।

গেমস তৈরিতে: বর্তমানে কম্পিউটার গেমস তৈরি করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে। বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ গেমসই এ মডেল অনুসরণ করে তৈরি। ভার্চুয়াল স্পোর্টস, ভার্চুয়াল পুলিশকপ, ভার্চুয়াল এ্যারোস্পেস ইত্যাদি গেমস বর্তমানে ব্যবহৃত হয়।

বিভিন্ন ইমেজ তৈরি ও দৃশ্যধারনে: বিভিন্ন সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য ধারণ করতে অ্যানিমেশন করার সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।

খেলাধুলায় : শরীরচর্চা, সাইক্লিং, স্ক্রিটিং, গলফ ইত্যাদি খেলার প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার করা হয়। খেলার কৌশল ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।

মিডিয়ায়: টেলিভিশন প্রোগ্রাম ও চলচ্চিত্র নির্মাণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার চলচ্চিত্রকে করেছে বাস্তব ভিত্তিক, অত্যাধুনিক, আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। যেমন- The Matrix, Vanilla Sky, Torn, The Lawnmower, Existenz ইত্যাদি। বিনোদনে : বিনোদনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হলো :

১. ভার্চুয়াল জাদুঘরে, যেমন- মিথস্ক্রিয় প্রদর্শনী

২. থিয়েটারে, যেমন- মিথস্ক্রিয় ক্রিয়াকাণ্ড

৩. চলচ্চিত্রে (যেমন- Ironman 3D) 

৪. ভার্চুয়াল থিম পার্কে

৫. আবিষ্কার কেন্দ্রে

৬. গ্যালারিতে।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায়: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যাদুঘরে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় যেমন- ভাস্কর্য (Sculptures), গুহা (Caves), স্মৃতিসৌধ (Monuments), ঐতিহাসিক ভবন (Historical Building), প্রত্নতাত্ত্বিক খনন (Archaeological dig), স্মৃতিস্তম্ভ (Stonchenge), প্রাচীন শহর ও গ্রাম (Old towns and village) সহ বিভিন্ন হাজার বছরের পুরাতন নির্দশন গুলো প্রদর্শনের জন্য যাদুঘরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীরা তা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.