রোবটবিজ্ঞান বা রোবটিক্স (Robotics) :
একচুয়েটর হলো এমন এক ধরনের মোটর যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরানো ও যান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি চালাতে শক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ, হাইড্রোলিক বাষ্প ও জলীয় বাষ্প ব্যবহার করা হয়। সফটওয়্যার, রোবট কন্ট্রোল সিস্টেম এবং মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
রোবট যে
নিয়ম
মেনে
কাজ
করবে
:
১৯২০ সালে চেক নাট্যকার কারো ক্যাপেক (hared Cepek) তার নাটকে প্রথম রোবট কথাটি ব্যবহার করেন এবং ১৯৪১ সালে জনপ্রিয় আমেরিকান লেখক এবং বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক আইজ্যাক অ্যাশিমো ছোটগল্প লিরা (Lira) তে সর্বপ্রথম রোবটিক্স শব্দটি ব্যবহার করেন। অ্যাশিমো তার ছোটগল্পে একটি কাল্পনিক মেশিনের (রোবট) কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং তার মতে মেশিনটি তিনটি নিয়ম মেনে কাজ করবে। নিয়মগুলো হলো।
নিয়ম
১ কল্পিত মেশিন বা রোবট কখনো
মানুষের ক্ষতি করবে না এবং মানুষকে
তার ক্ষতি করতে কোনো বাধা দেবে না।
নিয়ম
২: এটি প্রথম নিয়মটি লঙ্ঘন না করে মানুষের
নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে।
নিয়ম
৩ প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়ম
লঙ্ঘন না করে কল্পিত
মেশিনটি (রোট) সর্বদাই নিজেকে রক্ষা করবে।
সর্বপ্রথম ডিজিট ও প্রোগ্রামেবল রোবট আবিষ্কার করেন জর্জ ডেবল। এজন্য জর্জ ডেবলকে রোবটিক্সের জনক বলা হয়।
রোবট হতে পারে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়, আধা-স্বয়ংক্রিয়, রি-প্রোগ্রামেবল অথবা মানব নিয়ন্ত্রিত। তাই রোবট একটি প্রোগ্রাম কন্ট্রোল ডিভাইস। রোবটের সরাসরি সংজ্ঞা দিতে গেলে দাঁড়ায়, যে তড়িৎ যান্ত্রিক কাঠামো কোনো কাজ করতে সক্ষম সেটিই রোবট। সেন্সরের সাহায্যে নিজে নিজে ওপেন হতে পারে, এমন অটোমেটিক ডোরকে রোবট না বলে Intelligent System বলা হয় । রোবটিক্স বা রোবটবিজ্ঞান হলো রোবট বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসমূহ ডিজাইন ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিদ্যা। রোবটবিজ্ঞান ইলেকট্রনিক্স, প্রকৌশল, বলবিদ্যা, মেকাট্রনিক্স ও সফটওয়্যার বিজ্ঞানের সম্পর্কযুক্ত। বর্তমানে রোবটিক্স একটি দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র। কাজের ক্ষেত্রের ওপর ভিত্তি করে রোবট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- মোবাইল রোবটে পথের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় বেশি কাজ হচ্ছে। শিল্পক্ষেত্রে কাজের গতিশীলতা, মান নিয়ন্ত্রণ, ন্যূনতম খরচের দিক বিবেচনায় রেখে রোবট তৈরি ও ব্যবহার করা হয়। মেডিকেল রোবটের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হারানো হাত-পা এখন কৃত্রিম হাত, বাহু, পা ইত্যাদি দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। তাছাড়া ইদানীং সার্জারিতেও রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে।
বুদ্ধিমান রোবটে বিভিন্ন সেন্সর থাকে । বুদ্ধিমত্তার জন্য এর CPU এবং একচুয়েটর (Actuator) থাকে । ফিল্ড রোবটে একচুয়েটর হলো মোটর চাহিদা ও কাজের ধরন অনুযায়ী সেন্সর নির্দিষ্ট করা হয়। সে অনুযায়ী প্রোগ্রাম লেখা হয় ও সার্কিট ডিজাইন করা হয়। মোটরের টর্ক থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু তৈরির আগে সিম্যুলেশন করে ঠিক করা হয় এবং ডিজাইন অনুযায়ী বানানো হয়। নিত্য নতুন প্রয়োজনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন ডিজাইন করে বিভিন্ন ধরনের রোবট তৈরি করা হচ্ছে। রোবটের নিজস্ব কোনো বুদ্ধি নেই। মানুষ তার প্রয়োজনে রোবট তৈরি করছে। প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক পৃথকভাবে নির্দেশনা রোবটের মেমোরিতে পূর্ব থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়। রোবট তৈরি করা খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল । প্রতিটি রোবট শুধু নির্দেশিত কাজটিই করতে সক্ষম। রোবট অত্যন্ত দ্রুত, ক্লান্তিহীন এবং নিখুঁত কর্মক্ষম স্বয়ংক্রিয় আধুনিক যন্ত্র। রোবট অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোসার্কিটের উপাদান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ও অবিশ্বাস্যভাবে পরীক্ষা করতে পারে যা মানুষের পক্ষে কঠিন ও অসম্ভব ।
চিত্র: শিল্প-কারখানায় রোবটের ব্যবহার
শিল্প রোবট হলো তিন বা ততোধিক অক্ষের মধ্যে প্রযোজ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধস্তিত ব্যবহারযোগ্য প্রোগ্রামেবল যজ্ঞ যা অটোমেশন অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে ব্যবহার করা যায়।
চিত্র: ক্লাসে রোবটের ব্যবহার
শিক্ষাদানে রোবট (Robot in Teaching) :
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে শিক্ষাদানে রোবটের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। রোবট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক ব্যবহার করা হয় যাদের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়। রোবট নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইক্রোফোন ও ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। এসব রোবটকে 'টেলিপ্রেজেন্স রোবট' বলে। রোবটগুলোর মধ্যে ভয়েস রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই